বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।
মামুনুল হককে কয়েকঘন্টা সেখানে অবরুদ্ধ করে রাখার পরে হেফাজতে ইসলামের সমর্থক এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা পাল্টা হামলা চালিয়ে তাকে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁও থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ বলছে, ঢাকার কাছেই সোনারগাঁও এলাকায় অবস্থিত একটি রিসোর্টে শনিবার বিকেলে তাকে ঘেরাও করে রাখে স্থানীয় কিছু লোকজন
তারা অভিযোগ করেন, মামুনুল হক একজন নারীকে নিয়ে রিসোর্টে ঘুরতে গিয়েছেন। অন্যদিকে মামুনুল হক বলেছেন, তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে ঘুরতে গিয়েছেন।
এক পর্যায়ে পুলিশও সেখানে উপস্থিত হয়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষের ভেতরে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি মামুনুল হককে নানা প্রশ্ন করছে।
এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন, “এই মহিলা কী হয় আপনার?”
জবাবে মামুনুল হক বলেন, “আমার সেকেন্ড ওয়াইফ। আমি তাকে শরিয়তসম্মত ভাবে বিয়ে করছি।”
তখন আরেক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কবে বিয়ে করছেন?”
জবাবে মামুনুল হক বলেন, ” দুই বছর।”
মামুনুল হক বলেন, তিনি বেড়াতে সে রিসোর্টে গিয়েছেন।
ভিডিওতে মামুনুল হককে বলতে দেখা যায়, “আপনারা সবাই আমার সাথে দুর্ব্যবহার করছেন। ”
ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু ব্যক্তি নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে মামুনুল হককে নানা প্রশ্ন করছেন
উল্লেখ্য:
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন মামুনুল হক।
মামুনুল হককে যখন তার কক্ষে ঘেরাও করে রাখা হয় তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁও থানার ওসি অপারেশন্স মফিদুর রহমান। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, মামুনুল হকের সাথে যে নারী ছিল তাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করেছেন তিনি।
মি. রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা মামুনুল হকের সাথে আলোচনা করছেন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
এদিকে মামুনুল হককে লাঞ্ছিত করার ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যে সাতটার পরে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মী ও মাদ্রাসার ছাত্ররা রয়েল রিসোর্টে এসে ভাঙচুর চালিয়ে মামুনুল হককে নিয়ে যায়।
তবে পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, হেফাজতে ইসলামের নেতাদের হাতে মামুনুল হককে তুলে দেয়া হয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়সাল রাত নয়টার দিকে মামুনুল হককে আনতে নারায়ণগঞ্জে যান। সেখান থেকে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, মামুনুল হককে যারা লাঞ্ছিত করেছে তাদের গ্রেফতার এবং শাস্তির জন্য প্রশাসনের কাছে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে বলে জানান মোহাম্মদ ফয়সাল।
হেফাজতের সমর্থক এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা রিসোর্টে হামলা চালায়নি বলে দাবি করেন মি. ফয়সাল।
তিনি বলেন, ” মাওলানা মামুনুল হক একজন জনপ্রিয় আলেম। ওনাকে আটকে রেখে লাঞ্ছিত করার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় মানুষজন হয়তো সেখানে গিয়েছে। ”
এদিকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, পুলিশ মামুনুল হককে হেফাজতের নেতাদের হাতে তুলে দেয়নি।
পুলিশ সুপার বলেন, ” ওনার দ্বিতীয় বিয়ে সস্পর্কে আমরা যাচাই-বাছাই করছিলাম। এ সময় তার লোকজন সেখানে এসে উপস্থিত হলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এসময় মামুনুল হক এর সমর্থকরা তাকে নিয়ে চলে যান।”
Leave a Reply