প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করে বৈদেশিক মুদ্রা আনছেন নারী উদ্যোক্তা তাসলিমা নামের এক নারী।
তাসলিমা সুলতানা ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন নিজে কিছু করার হলেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। আর তার সেই স্বপ্ন থেকেই এগিয়ে যাওয়ার গল্প। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করায় ছিল তার মূল লক্ষ্য। বলছিলাম মাগুরা সদরের বড়খরি গ্রামের তাসলিমা সুলতানা নামে এক নারী উদ্যোক্তার কথা। যিনি নিজ বাড়িতে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা গড়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন এবং ওই এলাকার প্রায় ৫০জন দরিদ্র নারীসহ কর্মসংস্থান হয়েছে শত শত পরিবারের। পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা ও নারীর অর্থনৈতিক কাজে বাড়িয়েছেন অংশগ্রহণ। এই উদ্যোক্তা মনে করেন সরকারের সহায়তা পেলে স্থানীয়ভাবে তৈরি যন্ত্রের পরিবর্তে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপন করে বৃহৎ পরিমন্ডলে ব্যবসা প্রসার ঘটানো সম্ভাব। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থানের। অর্থনৈতিতে যোগ হবে নতুন এক মাত্রা।
মাগুরা যশোর সড়কের বড়খড়ি গ্রামে ফোরস্টার প্লাস্টিক রিসাইক্লিং নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চোখে পড়ে, বিভিন্ন স্থান থেকে প্লাস্টিকের ফেলে দেয়া পুরাতন বোতল, চেয়ার, টেবিলসহ বিভিন্ন তৈজষপত্র বর্জ হিসেবে কিনে এনে এখানে তা নানা রং আলাদা করে বাছাই করা হয়। এরপর নির্দিষ্ট মেশিনে প্লাস্টিকগুলিকে প্রথমে কেটে টুকরো করা হচ্ছে। পরে সেগুলিকে একটি পাত্রে দিয়ে মেশিনের মাধ্যমে সাবানগুড়ো দিয়ে ধুয়ে চৌবাচ্চায় ফেলা হচ্ছে। পরে কাটা প্লাস্টিক অপর একটি ইলেকট্রিক ড্রায়ারের মাধ্যমে শুকিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হচ্ছে। পরে সেগুলো ঠান্ডা হলে বস্তায় ভরে রাখা হচ্ছে রপ্তানির উদ্দেশ্যে।
উদ্যোক্তা তাসলিমা সুলতানা জানান, এসব প্লাস্টিক বিভিন্নভাবে পানি ও মাটিকে দূষিত করে। প্রথম দিকে এগুলিকে সংগ্রহ করে ট্রাকে ভরে ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিতাম। সেখান থেকে তারা পুন: প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করতেন। ২০১৯ সালে প্রথম প্রক্রিয়াজাত করা প্লাস্টিক ভারত, চিন ও ভিয়েতনামে পাঠানো শুরু করি। এরপর কোভিডের কারণে কিছুদিন অনিয়মিত থাকলেও বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখন আবার নিয়মিত ভাবে কাজ শুরু করেছি। তিনি আরো জানান, বছরে এখান থেকে তিনি প্রক্রিয়াজাত করছেন অন্তত ৪শ টন প্লাস্টিক চিপস। যার বাজার মূল্য অন্তত ৪ কোটি টাকা। দেশে ও বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ খাতে উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। তবে এ কারখানাটি সনাতন পদ্ধতিতে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করার পরিবর্তে যদি স্বয়ংক্রীয় ও কম্পিউটর নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রপাতি স্থাপন করা যেত তাহলে আরও ব্যাপক পরিসরে এ প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে পারতেন। পুন: প্রক্রিয়াজাত করা প্লাস্টিক এর চাহিদা দেশে বিদেশে ব্যাপক। সরকারি সহায়তা বা ব্যাংকের সহায়তা পেলে স্বয়ংক্রীয় মেশিন স্থাপন করে এখান থেকে কমপক্ষে ৫শ মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারবেন তিনি। এখাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও ব্যাপক সম্ভবনার কথা জানান।
প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার মোঃ সবুর আলী জানান, প্লাস্টিকের এসব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আবার আমাদের দেশে মানুষ বেশি হওয়ায় সব জায়গাতেই প্রচুর বর্জ পাওয়া যায়। এর ফলে একদিকে যেমন আমাদের পরিবেশের উপকার হচ্ছে অন্যদিকে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। সরকারের প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে আমরা ফেলে দেয়া প্লাস্টিক দিয়েই অনেক মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন বা বদলে দেয়া সম্ভব।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি এটিএম আনিসুর রহমান বলেন, প্লাস্টিক বর্জ আমাদের মাটি, পানি ও পরিবেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে। সকল ধরনের প্লাস্টিক পুন: প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে আমাদের পরিবেশ কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব। উপরন্তু এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি আমাদের আরো বেশি আশাবাদি করে।
কারখানাটি পরিদর্শন করে একজন নারীর এমন সাহসি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এ ধরনের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প উদ্যোগকে লাভজনক হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বিসিক মাগুরা উপকেন্দ্রের জেলা ব্যবস্থাপক ফরিদা ইয়াসমিন।
Leave a Reply