বরিশালের আগৈলঝাড়ায় অসহায় দরিদ্র বিধবা ময়না বেগমের জায়গা দখল করে ঘরের চারিদিকে কাটা তার দিয়ে বেড়া দিয়েছে প্রভাবশালী নুর মোহাম্মাদ হাওলাদার। ওই বিধবা ঘরে ঢুকতে না পেরে বেড়ার পাশে বসে কান্না করছেন। এঘটনায় সোমবার বিকেলে ময়না বেগমের ভাসুর নুরুল হক হাওলাদারের ছেলে সাইফুল ইসলাম হাওলাদার বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
সরেজমিন ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের দক্ষিন শিহিপাশা গ্রামে ময়না বেগম স্বামী সামচুল হক হাওলাদারের মৃত্যুর পর দুই মেয়ে নিয়ে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছিল। সামচুল হকের মৃত্যুর পরে ওই জায়গা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে একাধিক হামলা মামলা ও সালিশ মিমাংশা করা হলেও কোন সমাধান হয়নি।
জানা গেছে, উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের দক্ষিন শিহিপাশা গ্রামে মৃত আবুল কাশেম হাওলাদার ১৯৯০ সালে দলিল মুলে ১একর ৭৩ শতাংশ ও ডিগ্রী মুলে ১একর ৫৬ শতাংশসহ ৩ একর ২৯ শতাংশ জায়গা রেখে জান। তার মৃত্যুর পরে ওই জায়গার অংশিদার নুরু মোহাম্মাদ, নুরুল হক, সামচুল হক, সাইদুল হক হাওলাদার ও মা কুলসুম বেগম। এর মধ্যে সামচুল হক হাওলাদার মারা যাওয়ার পর তার জায়গার মালিক হন স্ত্রী ময়না বেগম ও তার দুই মেয়ে। ময়না বেগমের দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে তিনি একাই স্বামীর জায়গায় বসবাস করে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবন যাপন করে আসছিলেন।
সোমবার সকালে ময়না বেগম ঘর থেকে বের হয়ে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতে যায়। এ সুজোগে নুর মোহাম্মাদ হাওলাদার, তার ভাগ্নে হৃত্তিক, নাতী আকাশ, জামাই হাকিমসহ ১০-১২ জনের একটি দল সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ময়না বেগমের জায়গার চারিপাশে প্রায় তিনশত ফুট তার কাটা ও নেটের বেড়া দিয়ে ময়না বেগমের ঘর অবরুদ্ধ করে রাখে। এতে ময়না বেগমের রান্না ঘরের মধ্য দিয়ে তার কাটার বেড়া দেওয়ার ফলে সে সারাদিন ঘরে ঢুকতে না পারায় রান্না, গোসল, খাবারসহ কিছুই করতে পারেনি। সরেজমিনে সোমবার রাতে ওই বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় ময়না বেগম কাটাতারের বেড়ার পাশে বসে কান্নাকাটি করছে। তার কাটার বেড়া দেয়ার ফলে ময়না বেগমের অন্য ভাসুর নুরুল হক হাওলাদারের পরিবারও অবরুদ্ধ হয়ে পরে।
এঘটনায় সোমবার বিকেলে ময়না বেগমের ভাসুর নুরুল হক হাওলাদারের ছেলে সাইফুল ইসলাম হাওলাদার বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাখাওয়াত হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎখনিক গৈলা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান তালুকদারকে ঘটনাস্থলে সমাধানের জন্য পাঠালে প্রতিপক্ষ নুর মোহাম্মদ হাওলাদার তা মানেননি। এ সংবাদ জানতে পেরে সোমবার রাত ১০টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাখাওয়াত হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে অভিযুক্ত নুর মোহাম্মাদ ও তার নাতী আকাশ হাওলাদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বাকবিতন্ডার জড়িয়ে পরেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আগৈলঝাড়া থানায় ফোন করে পুলিশ নিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজন দিয়ে তার কাটার বেড়া উচ্ছেদ করে ময়না বেগম ও তার ভাসুরের পরিবারকে অবরুদ্ধ থেকে উদ্ধার করেন।এসময় বেড়া দেওয়ার মালামাল জব্দ করে গৈলা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে।
এব্যাপারে ময়না বেগম বলেন, আমি আমার মৃত. স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে বসবাস করছি। নুর মোহাম্মাদ আমাকে বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। উনি আমার ভাইসহ আমার নামে চারটি মামলা দিয়েছে। আমি অন্যের বাড়ীতে কাজ করে উপার্যন করা টাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত আদালতে যেতে হচ্ছে। আমি সারাদিন অন্যের বাড়ীতে কাজ করে বাড়ী ফিরে ঘড়ে ঢুকতে না পেরে সারাদিন না খেয়ে রাত পর্যন্ত বেড়ার পাশে বসে আছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নুর মোহাম্মাদ হাওলাদার বলেন, এলাকার গন্যমাণ্য ব্যক্তিরা জায়গা মেপে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আমার জয়গায় আমি তারকাটা দিয়ে বেড়া দিয়েছি। ওরা আমার নামে চারটি মামলা দিয়েছে। পূর্বে আমাকে হত্যার উদ্যেশে ফুলকুচি ও ইট দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করেছিল।
এ বিষয়ে এসআই সফিউদ্দিন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাখাওয়াত হোসেন স্যারের সাথে আমরা গিয়ে বেড়া উচ্ছেদ করেছি। মালামাল জব্দ করে গৈলা ইউনিয়ন পরিষদে রাখা হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে আমি তাৎক্ষনিক ঘটনা স্থলে ইউপি সদস্যকে পাঠিয়েছিলাম, রাতে গিয়ে বেড়া উচ্ছেদ করে অসহায় ময়না বেগমকে ঘরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বেড়ার মালামাল জব্দ করে গৈলা ইউনিয়ন পরিষদে রাখা হয়েছে।
Leave a Reply