বরিশালের বানারীপাড়ায় হাঁস-মুরগি ও মাছের প্রাকৃতিক খাবার ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ বা ‘প্যারেট পোকা’ চাষ করে এখন স্বাবলম্বী ‘এস. ইসলাম অ্যাগ্রোফার্ম’র স্বত্বাধিকারী জনপ্রিয় ও সফল কৃষক মো. সুলতান হোসেন। তিনি উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে তার বিশাল অ্যাগ্রোফার্মে আম, পেয়ারা, বড়ই, মাল্টা ও বায়োফ্লক্সে মাছ চাষের পাশাপাশি ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ বা ‘কালো মাছি’ ও তার লার্ভা উৎপাদন করে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এ পোকা ও তার লার্ভা হাঁস-মুরগি ও মাছের সুপার ফিড হিসেবে পরিচিত। এতে ৭০% এর ভিতরে প্রোটিন ৫০-৫৫% ও ফ্যাট ২০% মিলিয়ে ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামসহ পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এটি খাওয়ালে অন্য কোনো ভিটামিনের দরকার হয় না। এতে উৎপাদন খরচ তেমন নেই বললেই চলে। অন্যান্য খাবারের চেয়ে এ লার্ভা ৮০% খরচ বাঁচায়। অন্যান্য খাবার যেখানে ১০০ কেজি লাগে সেখানে মাত্র ২০-২৫ কেজি লার্ভাতেই যথেষ্ট। প্রথমে ২ হাজার টাকায় ১ কেজি লার্ভা কিনে ব্যবসা শুরু করলে আজীবন লাভ করা যায়। এতে উৎপাদন খরচ ৫০% বাঁচায়। প্রাথমিক উপকরণ ১ কেজি লার্ভা, ১টি নেটের মশারী, ৫টি গামলা, ২ কেজি মুরগির খাবার ও ৪ কেজি ওয়েস্ট (গোবর সার, কাঁচা সবজি বা ফলের উচ্ছিষ্ট ও গাছের পাতা)। কাঁচা সবজি, ফল ও গাছের পাতা সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং এতে লার্ভা ছাড়া হয়। লার্ভা পরবর্তীতে মাছিতে রূপান্তরিত হলে ডিম দেয়। ১টি মাছি ৭০০ থেকে ৮০০ ডিম দেয় এবং তা আবার লার্ভায় পরিণত হয়। কিছু লার্ভা পরিপূর্ণ মাছি উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ লার্ভাগুলে নেটের মধ্যে রাখা হয় এবং ডিম পাড়ার জন্য কাঠের টুকরা রাখা হয়। ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ বা ‘কালো মাছি’র আয়ু মাত্র ৪৫ দিন। ডিম ফোটার ৬ দিন থেকে ২৫/৩০ দিন পর্যন্ত এটি হাঁস-মুরগি ও মাছকে খাওয়ানো যায়। আফ্রিকা মহাদেশের কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে প্রথমে এটি আবিষ্কৃত হয়। আবর্জনা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমাতে মূলত এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরব্তীতে এটি ব্যবসা সফল হয়। বাংলাদেশের গাইবান্ধা, সিলেট, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ ও বরিশাল এ ৫টি জেলায় সীমিত আকারে ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’ বা ‘কালো মাছি’র চাষ হচ্ছে। বরিশালের প্রজেক্টের মাধ্যমে বানারীপাড়ায় এটিই প্রথম লার্ভা চাষ। এ প্রসঙ্গে বরিশালের বানারীপাড়ার জনপ্রিয় সফল ব্যবসায়ী ও কৃষক মো. সুলতান হোসেন জানান, আমি তিন মাস আগে থেকে অনলাইনে মাছির এ লার্ভা বাজারজাত করে আসছি। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও লার্ভা সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন প্রচুর অফার পাচ্ছি। সবাইকে এ লার্ভা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি মাটি ও কৃষিকে ভালোবেসে এ পেশায় এসেছি। এ পেশায় বহু পুরস্কার, সম্মাননা ও মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এ পেশা নিয়েই যেন সারাজীবন বেঁচে থাকতে পারি এজন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
Leave a Reply