সামিদুল ইসলাম, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি
জেলা পুলিশ বগুড়া’র অভিযানে শাজাহানপুর থানাধীন চাঞ্চল্যকর শাহজালাল তালুকদার পারভেজ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ০১ (এক) টি রামদা সহ ০২ (দুই) জন আসামী গ্রেফতার।বাদীনি মোছা: সামছুন নাহার বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানায় হাজির হইয়া এজাহার দায়ের করেন যে, তার স্বামী, শাহজালাল তালুকদার পারভেজ (৪৬), পিতা-মোঃ মনছুর আলী তালুকদার মন্টু সাং-সাবরুল, থানা- শাজাহানপুর, জেলা- বগুড়া, সদর থানা, বগুড়াধীন কৈচড় বিএম টেকনিক্যাল এন্ড কারিগরি কলেজের প্রভাষক পদে কর্মরত। এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাত আসামীগণ দীর্ঘদিন যাবৎ পূর্ব শত্রুতার জের ধরিয়া প্রায় সময় তাদের বাড়ীতে ও বাজারে তার স্বামীকে প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদান করিত।
গত ০২ তারিখ সকাল অনুমান ১০.১৫ ঘটিকার সময় তার স্বামী শাহজালাল তালুকদার পারভেজ সাংসারিক প্রয়োজনে তাহার ব্যবহৃত বাজাজ ডিসকভার ১৩৫ সিসি মোটরসাইলে যোগে নিজ বাড়ী হইতে বগুড়া শহরের উদ্দেশ্যে বাহির হইয়া একই তারিখ সকাল অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার সময় শাজাহানপুর থানাধীন মাথাইল চাপড় ফকিরপাড়া গ্রামস্থ জনৈক মোঃ সুমন (৩৮), পিতা- মোঃ আমজাদ ফকির এর বসত বাড়ীর সামনে পাকা রাস্তার উপর পৌঁছামাত্রা এজাহারনামীয় আসামীগণ ও অজ্ঞাতনামা আরো অনেকেসহ পূর্ব শত্রুতার জের ধরিয়া পরস্পর একই উদ্দেশ্যে হাতে ধারালো হাসুয়া, ছোরা, লোহার রাম দা ইত্যাদি নিয়া বাদীনির স্বামীর পথরোধ করিয়া ধারালো হাসুয়া দ্বারা হত্যার উদ্দেশ্যে তার স্বামীর মাথায় কোপ মারিলে তার স্বামী উক্ত কোপ ডান হাত দ্বারা প্রতিহত করিলে কোপটি তার স্বামীর হাতে লাগিয়া কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। তার স্বামী আসামীদের আক্রমণ হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল রাস্তার উপর ফেলিয়া দৌড়াইয়া জনৈক মোঃ সুমন ফকির এর বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করিলে আসামীগণ অস্ত্র-শস্ত্র নিয়া তার স্বামীর পিছনে পিছনে ধাওয়া করিয়া উক্ত বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করিয়া ধারালো রাম দা দ্বারা হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরিভাবে কোপ মারিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা রক্তাক্ত গুরুতর জখম করে।
এছাড়া রামদা দ্বারা কোপ মারিয়া তার স্বামীর ডান হাতের কব্জি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে। এছাড়া সকল আসামীগণ দেশীয় অস্ত্র দ্বারা তার স্বামীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কোপাইতে থাকে। বাদীনির স্বামীর ডাক চিৎকারে এলাকার লোকজন আগাইয়া আসিলে আসামীগন দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। উপস্থিত লোকজন তার স্বামীকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় অজ্ঞাত সিএনজি যোগে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়ায় নিয়া ভর্তি করে। পরবর্তীতে একই তারিখ বেলা অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন।
এ সংক্রান্তে তাৎক্ষণিক বগুড়া জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম, পিপিএম মহোদয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব মোঃ স্নিগ্ধ আখতার পিপিএম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জনাব মোঃ শরাফত ইসলাম দ্বয়ের তত্তাবধানে ওসি শাজাহানপুর থানা ও ডিবি বগুড়ার ইনচার্জ এর যৌথ নেতৃত্বে ডিবি বগুড়া ও শাজাহানপুর থানা পুলিশের যৌথ টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইং ১৩ খ্রি. তারিখ বিভিন্ন সময়ে গাজীপুর জেলা ও বগুড়া জেলার কাহালু থানাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর শাহজালাল তালুকদার ও পারভেজ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ০১ (এক) টি রামদা সহ ০২ (দুই) জন আসামী গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের নাম ও ঠিকানা- ১। মোঃ কাউছার (২০), পিতা-মোঃ দুলু মিয়া, সাং-সাবরুল ২। মোঃ আরিফ হোসেন (২০), পিতা-মৃত আবুল হোসেন, সাং সাবরুল ধাপপাড়া উভয় থানা- শাজাহানপুর, জেলা বগুড়া।
উদ্ধারকৃত আলামত:
১। একটি রামদা (যা হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত)। ২। একটি স্কুল ব্যাগ (যাহাতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র বহন করা হয়)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীদ্বয় জানায় যে, ঘৃত আসামীদ্বয় সহ পূর্বের গ্রেফতারকৃত ও এজাহারনামীয়/অজ্ঞাত পলাতক আসামীগণ পরস্পর যোগসাজসে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ডিসিসড শাহজালাল তালুকদার ও পারভেজকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে ধৃত আসামীদ্বয় সহ গ্রেফতারকৃত ও এজাহারনামীয়/অজ্ঞাত পলাতক আসামীগণ পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গত ০২ খ্রি. বেলা অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার সময় বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানাধীন মাধাইল চাপড় ফকিরপাড়া গ্রামস্থ জনৈক মোঃ সুমন ফকির (৩৮), পিতা-মোঃ আমজাদ ফকির এর বসত বাড়ির সামনে পাকা রাস্তার উপর ডিসিসড শাহজালাল তালুকদার ও পারভেজ নিজ মোটরসাইকেল যোগে পৌঁছাইলে ধৃত আসামীদ্বয় সহ গ্রেফতারকৃত ও এজাহারনামীয়/অজ্ঞাত পলাতক আসামীগণ ডিসিসড এর পথরোধ করে ধারালো রামদা ও ছোরা দ্বারা এলোপাথারীভাবে কুপাইতে থাকে। একপর্যায়ে ডিসিসড মোটরসাইকেল ফেলে দিয়ে দৌড়ে জনৈক মোঃ সুমন ফকির (৩৮), পিতা-মোঃ আমজাদ ফকির এর বসত বাড়িতে প্রবেশ করিলে আসামীগণ পিছুপিছু দৌড়াইয়া বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে ডিসিসড এর ডান হাতের কব্জি শরীর হতে বিচ্ছিন্ন করে ও মাথার পিছনে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করিয়া গুরুতর রক্তার জখম করিয়া ঘটনাস্থল ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
প্রকাশ থাকে যে, অন্যান্য পলাতক এজাহারনামীয়/অজ্ঞাত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত আছে।
Leave a Reply