কে হবে আগামীকালের মার্কিন নির্বাচনে বিজয়ী কিংবা প্রেসিডেন্ট এমন জল্পনা কল্পনা এখন অনেকের মাঝেই।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এই উত্তাপ এই মূহুর্তে বিদ্যমান। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের চায়ের দোকানেও এখন আলোচনার বিষয় বস্তু আমেরিকার নির্বাচন।
বিশেষ করে বহির্বিশ্বের খবরা-খবর রাখেন কিংবা আগ্রহ আছে এমন মানুষ মাত্রই এখন ভাবনা আগামীকালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন কি হবে তা নিয়ে।
জো বাইডেন নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প?
নির্বাচন জরিপ কিংবা আগাম ভোটে কে বেশি এগিয়ে এসব এখন সবচাইতে বেশি আলোচিত বিষয়।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পদ্ধতি কিন্তু আমাদের দেশের মতো নয়!
একেবারেই ভিন্ন রকম! তাই জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকলে কিংবা বেশি ভোট পেলেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া যায়না সেখানে!
তাহলে কিভাবে?
জেনে নেওয়া যাক মার্কিন নির্বাচনের পদ্ধতি!
আজ ৩ নভেম্বর ২০২০ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
তবে জেনে রাখা ভালো যে এখানে সর্বোচ্চ পাবলিক ভোট বা পপুলার ভোট পেলেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া যায়না।
তাহেলে মার্কিন জনগণ কাকে ভোট দেয়?
মার্কিন জনগণ সরাসরি কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেয় না। তারা মূলতঃ ভোট দেয় ইলেকটোরাল কলেজ বা ইলেকটরসদের যারা একটি অফিয়াল গ্রুপ। এই ইলেকটোরাল ভোটেই প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়।
এই ইলেকটোরালদের এসেম্বলি প্রতি চার বছর পর পর বসে, নির্বাচন সমাপ্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এবং প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে।
ইলেকটোরাল কলেজ কি?
প্রতিটি মার্কিন অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে ইলেকটর সংখ্যা হয়ে থাকে যার উপর ভিত্তি করে আইন প্রণেতা হিসেবে ইউএস কংগ্রেস রিপ্রেজেনটেটিভ বা সিনেটে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।
উল্লেখ্য : ক্যালিফোর্নিয়ায় সর্বোচ্চ ৫৫ টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে অন্যদিকে অল্প জনসংখ্যার আলাস্কা, নর্থ ডাকোটা, ওয়াশিংটন ডিসি ও ওয়েওমিং স্টেটে রয়েছে মাত্র তিনটি করে ইলেকটোরাল ভোট।
মোট ইলেকটোরাল ভোট সংখ্যা কতো?
মার্কিন নির্বাচনে মোট ইলেকটর বা ইলেকটোরাল ভোট সংখ্যা ৫৮৩ তবে যে কাউকে হোয়াইট হাউসের চেয়ারে বসতে হলে পেতে হবে সর্ব নিম্ন ২৭০ অথবা তার অধিক ইলেকটোরাল ভোট।
ইলেকটোরাল ভোট কিভাবে পায়?
ধরাযাক, যদি কোন প্রার্থী টেক্সাসের ৫০.১% সাধারণ ভোটারদের প্রদেয় ভোট পায় তাহলে সেই প্রার্থী টেক্সাসের সবকটি অর্থাৎ ৩৮ টি ইলেকটোরাল ভোটই পেয়ে গেলো। সেই জন্য কোন প্রার্থীই কোন স্টেটে একচেটিয়া ভোট পাওয়ার চাইতে তাদের লক্ষ্য থাকে প্রতিযোগিতা মূলকভাবে সর্বোচ্চ স্টেট থেকে জয়লাভ করে আসতে পারা বিশেষ করে যে সকল স্টেটে ইলেকটোরাল ভোট বেশি।
মার্কিন নির্বাচনে পাবলিক ভোটে হেরেও কি কেউ প্রেসিডেন্ট হয়েছে?
হ্যা, এমনটি বিগত ৫টি মার্কিন নির্বাচনের ২ টিতেই হয়েছে।
যেমন গত ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প হিলারি ক্লিন্টনের চেয়ে ৩০ লক্ষেরও কম ভোট পেয়েছে তারপরও ইলেকটোরাল ভোট বেশি পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ডেমোক্রেট প্রার্থী আলগোর এর সাথে। জর্জ ডব্লিউ বুশ, আলগোরের চেয়ে পাঁচ লাখ ভোট কম পেয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে।
কেনো এমন নির্বাচন ব্যবস্থা করা হলো?
এটি মূলতঃ ১৭৮৭ সালে মার্কিন সংবিধান প্রণয়নের সময়ই করা হয়। এর কারন ছিলো দেশের বিশালায়তন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। কেনোনা এতো বিশাল দেশে পপুলার ভোটে নির্বাচন করা এবং যোগাযোগ রক্ষা করে যথাযথ ভাবে তা সম্পন্ন করা কঠিন বিধায় এই পদ্ধতির প্রচলন করা হয়। এখানে আরও একটি বিষয়ও কাজ করেছে এই সিস্টেম প্রনয়নের ক্ষেত্রে তা হলো আইনপ্রণেতাদের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা। এরদ্বারা আইনের শাসনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ আইনপ্রণেতাদের হাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষমতা প্রদান।
ইলেকটরদের কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে হয়?
সাধারণত যেই রাজ্যে যে প্রার্থীর পক্ষে বেশি ভোট পড়বে সেই প্রার্থীকেই সকল ইলেকটর সমর্থন দিবে, তবে এর বাহিরেও কোন ইলেকটর চাইলে অন্যজনকে ভোট দিতে পারে (যদিও এটি নীতি সম্মত নয়)। এমন যদি কেউ করে যে পপুলার ভোটের বিপরীতে অন্য প্রার্থীকে সমর্থন দেয় তাহলে তাকে “ফেইথলেস” বা বিশ্বাস ভঙ্গকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন গত নির্বাচনে ৭টি ইলেকরোলার কলেজের ভোট এভাবে দেওয়া হয়েছে যদি এর ফলে ফলাফলের কোন হেরফের হয়নি।
যদি কোন প্রার্থীই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে কি হবে?
যদি উভয় প্রার্থীই সমান সংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট পায় তাহলে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ, ইউএস আইনপ্রণেতাদের নিম্ন কক্ষ ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে। এমনটি মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে একবারই ঘটেছে আর সেটি হচ্ছে ১৮২৪ সালে এবং সেই নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলো এবং কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
সেই থেকে আজ পর্যন্ত মার্কিন নির্বাচনে দুই প্রার্থীর লড়াই বিদ্যমান।
অতএব, চুড়ান্ত ফলাফল কি হবে তা জানার জন্য আমেরিকার জনগণের মতো আমাদেরকেও অপেক্ষা করতে হবে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের রেজাল্টের উপর।
Leave a Reply