বরিশালের উজিরপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জীর্ণশীর্ণ ভবন নয়, তবে বর্ষার তীব্রতা এলেই চালের পানি হতে সরাসরি বৃষ্টি পড়ে বেঞ্চে। বৃষ্টির সময় ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়টির একটি ভবন ছাড়া সবগুলোই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রোদ বৃষ্টি ঝড়ে পুরাতন শ্রেণিকক্ষেই ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। বৃষ্টি নামলে শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ছাতা মাথায় দিয়েই ক্লাস করতে হয় তাদের। স্কুলের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বারবার বললেও তারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান কিন্তু এ যেন শিক্ষার্থীদের প্রতি নেই কোন দায়িত্ব। ভবনের স্তম্ভের (পিলার) পলেস্তারা উঠে দেখা দিয়েছে ফাটল। বের হয়ে এসেছে ইট-সিমেন্ট। নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হলেও মেলেনি সাড়া। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ভাঙাচোরা ভবনেই ঝুঁকির মধ্যে নেওয়া হচ্ছে ক্লাস।
কয়েকটি কক্ষের পলেস্তারা খসে পড়ছে টুপ টাপ করে। সব দেয়ালে ফাটল। এখানেই চলছে ১৬২ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান।
উপজেলার ৬৫ নং শোলক
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। আতঙ্ক নিয়ে বিদ্যালয়ে আসছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা বলছেন, বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই পাঠদান চলছে। এতে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় , ১৯৪০ সালে শোলক ইউনিয়নের শোলক প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরৈ এটি পূর্ণ নির্মাণ ১৯৮৭ সালে এবং রেজিস্টার্ড স্কুল জাতীয়করণ করে সরকার। গত
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁকা ভবন মাত্র ১ টি। শিক্ষার্থীদের চাপে
ছেলেমেয়েরা পড়ছেন টিনশেড ঘরে। সেখান হতে টপটপ বৃষ্টিতে ভিজছে বই চেয়ার টেবিলে বসতে হলে ধরতে হচ্ছে ছাতা। আর ছাতা না থাকলে তার আর এখানে অবস্থান সম্বব না। পরিদর্শনে এমন চিত্রই ফুটে উঠে। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শিক্ষকরা এসব দেখেও দেখেন না।
স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ১৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় শ্রেণী কক্ষ নেই। নতুন একটি ভবন থাকলেও ভবনে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের অফিস কক্ষ, ও ওই ভবনে বাকি তিনটি শ্রেণিকক্ষে রয়েছে। বাধ্য হয়েই পুরোনো টিনশেড কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাফিস বলেন, আমাদের স্কুলের চালের অবস্থা খুব খারাপ, সিলিংও ভাঙ্গা। একটু বৃষ্টি হলেই তাদের ক্লাস রুমের ভেতরে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়তে শুরু করে। মেঝেতে পানি জমে যায়।
তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীর সিফাত বলেন, ক্লাসের অবস্থা খুবই খারাপ। অকেজো ভবনেও আমাদের ক্লাস হচ্ছে। বেশি বৃষ্টি হলে চালের ফুঁটা দিয়ে পানি ঘরের ভিতরে পড়ে। গত এক সপ্তাহ ধরে শ্রেণিকক্ষের ভিতরেই আমাদের ছাতা কিংবা পলিথিন মাথায় দিয়ে ক্লাস করতে হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমে এভাবে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে একজন প্রধান শিক্ষক ও ৮ জন সহকারী শিক্ষাক পাঠদান করছেন।
নার্সারি বিভাগ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক।
এছাড়া একটি টিনের ঘরে চলছে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এই ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগও নেই। আরসিসি পিলার ও গ্রেট বিমগুলোতে বিস্তৃত ফাটল দেখা দেওয়ায় ভবনটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে থাকে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না।
স্থানীয় অভিভাবকরা বলছেন, সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে ভয়ে থাকতে হয়। কাছাকাছি ভালো কোনও স্কুল না থাকায় এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই সন্তানদের পড়ালেখা করতে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। মাঝে মাঝে শোনা যায়, অনেক অফিসার এসে দেখে গেছেন। কিন্তু আজও কোনও নতুন ভবন হলো না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
হাফিজুল ইসলাম বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়, স্কুলের ভবনগুলি এতই জরাজীর্ণ যে, শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিপূর্ণভাবে ক্লাস করছে। তা ছাড়া বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকেই শিক্ষার্থীরা ছাতা মাথায় দিয়ে শ্রেণী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, নতুন একটি একাডেমীক ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করলে মেলেনি সারা। তাই এই বৃষ্টির মধ্যে বাধ্য হয়েই পুরোনো টিনশেড ক্লাস নীতি হচ্ছে। বই খাতা সহ পোশাক ভিজে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বাড়ি থেকে ছাতা নিয়ে এসে ক্লাস করছে।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খাদিজা খানম
বলেন, ‘নতুন একটি ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে আবেদন করা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। যেকোনও সময় বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
উজিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবন হওয়ার কথা ছিল।
বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণের তালিকায় আছে।
Leave a Reply