এস এম আনিছুর রহমান চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে স্বামীর তালাক নোটিশের বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় দেড় বছর বয়সী শিশু সন্তানসহ ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক গৃহবধূ। বুধবার বিকেল ৩টার দিকে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের হাজীগঞ্জ কাজীরগাঁও এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
তাহমিনা আক্তার (২৪) নামের এই নারী তাঁর সন্তান আব্দুর রহমানকে নিয়ে চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া চট্টগ্রামগামী ‘সাগরিকা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। তিনি আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট করেন।
তাহমিনা হাজীগঞ্জ উপজেলার ধড্ডা গ্রামের দেওয়াঞ্জি বাড়ীর মো. রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তাঁর মুনতাহা (৫) নামে কন্যা সন্তানও রয়েছে। ২০১৯ সালে একই উপজেলার সন্না গ্রামের হাওলাদার বাড়ির মো. নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মো. মাসুদুজ্জামান হাওলাদারের সঙ্গে সামাজিকভাবে তাহমিনার বিয়ে হয়।
আত্মহত্যার ঘটনার পর হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এরপর বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে চাঁদপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানা পুলিশ।
চাঁদপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদু রহমান বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে সুরতহাল তৈরি করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘তাহমিনা আজকে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর আগে তাহমিনা গত ২৮ মার্চ তাঁর স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগের পর স্বামী দেশে আসলেও কোনো সুরাহা না পাওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন বলে স্থানীয়দের ধারণা।’
অভিযোগ উল্লেখ করা হয়, ‘তাহমিনা আক্তার বিয়ের পর থেকেই তাঁর বাবার বাড়িতে থাকতেন। কারণ বিয়ের পরে বাবার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ধার নিয়ে স্বামীকে কুয়েত পাঠান। স্বামী প্রবাসে থাকা অবস্থায় তাহমিনার সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মোবাইলফোনে বাক–বিতন্ডা হয়। স্বামী তাঁকে বাবার বাড়ি থেকে অন্যত্র থাকতে বলেন। যে কারণে তিনি হাজীগঞ্জ মকিবাদ চৌধুরী পাড়ায় দুই সন্তানকে নিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। সেখানে থাকা অবস্থায় স্বামী তাঁকে নানা অপবাদ দিয়ে মোবাইলফোনে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতেন এবং তাঁদের ভরণ পোষণ দিতেন না। যে কারণে স্বামী প্রবাসে থাকা অবস্থায় তাঁকে তালাক দেন।’
স্বজনেরা জানায়, গত ১৮ এপ্রিল তাহমিনার স্বামী মো. মাসুদুজ্জামান হাওলাদার দেশে আসেন এবং মোবাইল ফোনে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। তাহমিনাকে পুনরায় তাঁর সংসারে যাওয়ার জন্য বলেন। স্বামীর সংসারে না গেলে স্বামী-স্ত্রীর বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ি দেওয়ার হুমকি দেয় মাসুদুজ্জামান।’
তাহমিনা আক্তার হাজীগঞ্জ থানায় গত ২৮ মার্চ অভিযোগ দেওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমানকে।
এসআই আব্দুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি সুরাহার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ অভিযুক্ত মাসুদুজ্জামান পরিবারের সঙ্গে বসার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁরা রাজি হয়নি। এরপর গত এক সপ্তাহ আগে মাসুদ্দুজামান দেশে আসেন। কিন্তু তিনি বাড়িতে না এসে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকেন। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে কোনো সুরাহা করা সম্ভব হয়নি। তিনি আবার প্রবাসে চলেও গেছেন।
Leave a Reply