বরিশালের চরমোনাই মাদরাসা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল ছিল বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবুল কাশেম।
তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমীর মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই রহ.কে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ এর বক্তব্য কাল্পনিক, বাস্তবতা বির্বজিত এবং অসত্য। এমন একজন মহান বুজুর্গ-এর বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বলেন, এর আগেও পীর সাহেব চরমোনাই রহ. এর জীবদ্দশায় একটি মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছে। তখন জাতীয় প্রেসক্লাব চত্তরে আয়োজিত বিশাল গণসমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই রহ. চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাকে রাজাকার হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে আমি ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে রাজি আছি।’ তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করে মৃত্যুর ১৪ বছর পর এসে হানিফ সাহেবরা মৃত মানুষের বিরুদ্ধে অযাচিত বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, হানিফ সাহেবকে তার বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করতে হবে। বরিশাল জেলা ও চরমোনাই অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা এমনকি হিন্দু মুক্তিযোদ্ধারাও এধরণের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়ে পীর সাহেব রহ. চরমোনাই দরবারকে মুক্তিযুদ্ধের ঘাঁটি প্রমাণ করেছেন এবং উল্টো চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন।
আবুল কাশেম বলেন, চরমোনাই মাদরাসা ও পীর সাহেব চরমোনাই রহ. ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী। পীর সাহেব চরমোনাই রহ. ছিলেন উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় ও অধ্যাত্মিক রাজনৈতিক নেতা। তাকে মিথ্যা তকমা দিয়ে হানিফ সাহেবরাই ইতিহাসে জঘন্য ঘৃণিত ও নিন্দিত হয়ে থাকবেন। তিনি অবিলম্বে মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের জন্য দেশবাসির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম (রহ.) মরহুম পীর সাহেব চরমোনাইকে রাজাকারের সহযোগী বলে আওয়ামীলীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ এর দেয়া অসত্য ও বাস্তবতা বিবর্জিত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করার দাবী জানিয়েছে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিতে সংগঠনটির নেতারা বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (সাবেক ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন) এর প্রতিষ্ঠাতা আমীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই (রহ.) ৭১ সালে পাকিস্তানের সহযোগীতা করে চরমোনাই মাদরাসায় আশ্রয় নেয়া মা বোনদেরকে গনিমতের মাল বলে ফতোয়া দিয়েছেন বলে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব মাহবুবুল আলম হানিফ এর স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বক্তব্য কাল্পনিক, অসত্য, বাস্তবতা বিবর্জিত, নির্লজ্জ মিথ্যাচার, উদ্দেশ্য প্রনোদিত, কাল্পনিক ও ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (সাবেক ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন) এর প্রতিষ্ঠাতা আমীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই (রহ.) সম্পর্কে আওয়ামীলীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ এর অসত্য বক্তব্যের প্রতিবাদে গণমাধ্যমে প্রদত্ত বিবৃতিদাতারা হলেন, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির, সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ নূরুজ্জামান সরকার ও সেক্রেটারী আরিফ বিন মেহের উদ্দিন।
মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ নেতৃবৃন্দ বলেন, সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.) এর ইন্তেকালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জনাব তোফায়েল আহমেদ ও আওয়ামীলীগ নেতা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ চরমোনাইতে অনুষ্ঠিত জানাজায় শরীক হয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন।
‘তবে আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনা কি একজন রাজাকারের সহযোগীর ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করেছেন? তোফায়েল আহমদ ও আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ সাহেব রাজাকারের সহযোগীর জানাজায় অংশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন? তারা গোপালগঞ্জ ও বরিশাল অঞ্চলের মানুষ হয়ে এ তথ্য জানলেন না, ৫০ বছর পরে এসে জানলেন হানিফ? হানিফ সাহেবের উচিত সৈয়দ ফজলুল করীম রহঃ এর ইন্তেকালে শেখ হাসিনার দেয়া বিবৃতি ও জানাজায় জনাব তোফায়েল আহমেদের দেয়া বক্তব্য পড়ে নেয়া।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তৎকালীন সময়ে ইসলাম বিরোধীদের ঢালাও মিথ্যা অভিযোগের জবাবে ঐতিহাসিক মানিক মিয়া এভিনিউতে আয়েজিত বিশাল জনসমুদ্রে সৈয়দ ফজলুল করীম রহঃ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে বলেছিলেন, “আমি স্বাধীনতার বিপক্ষে নই, স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম। চরমোনাই মাদরাসা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল ছিল। এর পরেও কেউ যদি প্রমান করতে পারে, আমি স্বাধীনতা বিরোধী ছিলাম তবে প্রয়োজনে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে রাজি আছি।” যা তৎকালীন সময়ে জাতীয় গণমাধ্যম গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছিলো। এর পরেও একটি মিমাংসিত বিষয়ে হানিফ সাহেবের বিতর্কিত বক্তব্যে দেশবাসী হতবাক হয়েছে।
Leave a Reply