না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন খ্যাতিমান সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ।মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।মৃত্যুর সময় স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন তিনি ।সৈয়দ আবুল মকসুদের ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ গণমাধ্যমকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্কয়ার হাসপাতালের ইনফরমেশন ডেস্ক কর্মকর্তা মারিয়া সরকার গণমাধ্যমকে জানান, সন্ধ্যা ৭টা ৯ মিনিটে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় আবুল মকসুদকে ধানমন্ডির বাসা থেকে স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান, তিনি পথেই মারা গেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জের এলাচিপুরে জন্মগ্রহন করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।তার পিতা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মাতা সালেহা বেগম। ঢাকা কলেজ থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক দেন, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং পরে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি থেকে করেছেন সাংবাদিকতা বিষয়ে ডিপ্লোমা। তিনি একাধারে দেশের রাজনীতি, সাহিত্য ও সমাজ সংস্কৃতি নিয়ে লিখেছেন নানা বই ।এ পর্যন্ত বই লিখেছেন চল্লিশটির ও ওপরে, লিখেছেন বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধও। এর মধ্যে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর জীবন, কর্মকান্ড, রাজনীতি ও দর্শন,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য, ভাসানী কাহিনী, স্মৃতিতে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,গান্ধী মিশন ডায়েরি, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশ দার্শনিক, পথিকৃৎ নারীবাদী খায়রুন্নেসা খাতুন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী জীবন ও সাহিত্য, হরিশচন্দ্র মিত্র উল্লেখযোগ্য। যুদ্ধ ও মানুষের মূর্খতা, গান্ধী, নেহেরু ও নোয়াখালী, ঢাকার বুদ্ধদেব বসু, রবীন্দ্রনাথের ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন, প্রভৃতি, প্রতীচ্য প্রতিভা, কাজী ইমদাদুল হক রচনাবলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা, অরণ্য বেতার, বাঙালি জাতি বাঙালি মুসলমান ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি ও ধর্মীয় রাজনীতি, রবীন্দ্র রাজনীতি তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ সমূহ ।পাশাপাশি করেছেন কাব্যচর্চাও রয়েছে তার দুটি কাব্যগ্রন্থ, একটি কাব্য সংকলন।বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে লুফে নেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। এটি ছিল পাকিস্তান সোশ্যালিস্ট পার্টির মুখপত্র। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সমর্থিত সাপ্তাহিক ‘জনতা’য় কাজ করেন কিছুদিন। পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বার্তা সংস্থায় যোগ দেন। ২০০৮ সালের ২ মার্চ বার্তা সংস্থার সম্পাদকীয় বিভাগের চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি দৈনিক প্রথম আলোর একজন নিয়মিত কলামিস্ট। এই দৈনিকে ‘সহজিয়া কড়চা’ এবং ‘বাঘা তেঁতুল’ শিরোনামে তিনি একাধারে সমাজ, রাজনীতি ও সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে কলাম লেখেন। তিনি অসংখ্য ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন। এর মধ্যে ‘এ জার্নাল অব জার্মানি’ অন্যতম। তার এ অবদানের জন্য বাংলার মানুষ তাকে মনে গেঁথে রাখবে।
Leave a Reply